শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা: তৃতীয় অধ্যায় – কর্মযোগ (গীতাশাস্ত্রী জগদীশচন্দ্র ঘোষ)

Tags

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা: তৃতীয় অধ্যায় – কর্মযোগ

(গীতাশাস্ত্রী জগদীশচন্দ্র ঘোষ)
Image result for bhagavad gita chapter 3
অর্জ্জুন উবাচ –
জ্যায়সী চেৎ কর্ম্মণস্তে মত্য বুদ্ধির্জনার্দ্দন।
তৎ কিং কর্ম্মণি ঘোরে মাং নিয়োজয়সি কেশব।।১
ব্যামিশ্রেণেব বাক্যেন বুদ্ধিং মোহয়সীব মে।
তদেকং বদ নিশ্চিত্য যেন শ্রেয়োহহমাপ্নুয়াম্।।২
অর্থঃ-(১,২) অর্জ্জুন বলিলেন – হে জনার্দ্দন, যদি তোমার মতে কর্ম্ম হইতে বুদ্ধি শ্রেষ্ঠ, তবে হে কেশব, আমাকে হিংসাত্মক কর্ম্মে কেন নিযুক্ত করিতেছ? বিমিশ্র বাক্যদ্বারা কেন আমার মনকে মোহিত করিতেছ; যাহাদ্বারা আমি শ্রেয় লাভ করিতে পারি সেই একটি (পথ) আমাকে নিশ্চিত করিয়া বল।
লোকেহস্মিন্ দ্বিবিধা নিষ্ঠা পুরা প্রোক্তা ময়ানঘ।
জ্ঞানযোগেন সাংখ্যানাং কর্ম্মযোগেন যোগিনাম্।।৩
অর্থঃ-(৩) হে অনঘ, ইহলোকে দ্বিবিধ নিষ্ঠা আছে, ইহা পূর্ব্বে বলিয়াছি। সাংখ্যদিগের জন্য জ্ঞানযোগ এবং কর্ম্মীদিগের জন্য কর্ম্মযোগ।
ন কর্ম্মণামনারম্ভান্নৈষ্কর্ম্ম্যং পুরুষোহশ্ন তে।
ন চ সংন্যসনাদেব সিদ্ধিং সমধিগচ্ছতি।।৪
অর্থঃ-(৪) কর্মচেষ্টা না করিলেই পুরুষ নৈস্কর্ম্ম্যলাভ করিতে পারে না, আর (কামনা ত্যাগ ব্যতীত) কর্ম্মত্যাগ করিলেই সিদ্ধিলাভ হয় না।
ন হি কশ্চিৎ ক্ষণমপি জাতু তিষ্ঠত্যকর্ম্মকৃৎ।
কার্য্যতে হ্যবশঃ কর্ম্ম সর্ব্বঃ প্রকৃতিজৈর্গুণৈঃ।।৫
অর্থঃ-(৫) কেহই কখনো ক্ষণকাল কর্ম্ম না করিয়া থাকিতে পারে না, কেননা, প্রকৃতির গুণে অবশ হইয়া সকলেই কর্ম্ম করিতে বাধ্য হয়।
কর্ম্মেন্দ্রিয়াণি সংযম্য য আস্তে মনসা স্মরন্।
ইন্দ্রিয়ার্থান্ বিমূঢ়াত্মা মিথ্যাচারঃ স উচ্যতে।।৬
অর্থঃ-(৬) যে ভ্রান্তমতি হস্তপদাদি কর্ম্মেন্দ্রিয় সকল সংযত করিয়া অবশ্তিতি করে, অথচ মনে মনে ইন্দ্রিয়-বিষয়সকল স্মরণ করে, সে মিথ্যাচারী।
যস্ত্বিন্দ্রিয়াণি মনসা নিয়ম্যারভতেহর্জ্জুন।
কর্ম্মেন্দ্রিয়ৈঃ কর্ম্মযোগমসক্তঃ স বিশিষ্যতে।।৭
অর্থঃ-(৭) কিন্তু যিনি মনের দ্বারা জ্ঞানেন্দ্রিয়সকল সংযত করিয়া অনাসক্ত হইয়া কর্ম্মেন্দ্রিয়ের দ্বারা কর্ম্মযোগের আরম্ভ করেন, তিনিই শ্রেষ্ঠ।
নিয়তং কুরু কর্ম্ম ত্বং কর্ম্ম জ্যায়ো হ্যকর্ম্মণঃ।
শরীরযাত্রাপি চ তে ন প্রসিধ্যেদকর্ম্মণঃ।।৮
অর্থঃ-(৮) তুমি নিয়ত কর্ম্ম কর; কর্ম্মশূন্যতা অপেক্ষা কর্ম্ম শ্রেষ্ঠ, কর্ম্ম না করিয়া তোমার দেহযাত্রাও নির্ব্বাহ হইতে পারে না।
যজ্ঞার্থাৎ কর্ম্মণোহন্যত্র লোকোহয়ং কর্ম্মবন্ধনঃ।
তদর্থং কর্ম্ম কৌন্তেয় মুক্তসঙ্গঃ সমাচর।।৯
অর্থঃ-(৯) যজ্ঞার্থ যে কর্ম্ম তদ্ভিন্ন অন্য কর্ম্ম মনুষ্যের বন্ধনের কারণ। হে কৌন্তেয় তুমি সেই উদ্দেশ্যে (যজ্ঞার্থ) অনাসক্ত হইয়া কর্ম্ম কর।
সহযজ্ঞাঃ প্রজাঃ সৃষ্ট্বা পুরোবাচ প্রজাপতিঃ।
অনেন প্রসবিষ্যধ্বমেষ বোহস্ত্বিষ্টকামধুক্।।১০
অর্থঃ-(১০) সৃষ্টির প্রারম্ভে প্রজাপতি যজ্ঞের সহিত প্রজা সৃষ্টি করিয়া বলিয়াছিলেন – তোমরা এই যজ্ঞদ্বারা উত্তরোত্তর বর্দ্ধিত হও; এই যজ্ঞ তোমাদের অভীষ্টপ্রদ হউক।
দেবান্ ভাবয়তানেন তে দেবা ভাবয়ন্তু বঃ।
পরস্পরং ভাবয়ন্তঃ শ্রেয়ঃ পরমবাপ্ স্যথ।।১১
অর্থঃ-(১১) এই যজ্ঞদ্বারা তোমরা দেবগণকে (ঘৃতাহুতি প্রদানে) সংবর্দ্ধনা কর, সেই দেবগণও (বৃষ্ট্যাদি দ্বারা) তোমাদিগকে সংবর্দ্ধিত করুন; এইরূপে পরস্পরের সংবর্দ্ধনা দ্বারা পরম মঙ্গল লাভ করিবে।
ইষ্টান্ ভোগান্ হি বো দেবা দাস্যন্তে যজ্ঞভাবিতাঃ।
তৈর্দত্তানপ্রদায়ৈভ্যো যো ভুঙ্ ক্তে স্তেন এব সঃ।।১২
অর্থঃ-(১২) যেহেতু, দেবগণ যজ্ঞাদিদ্বারা সংবর্দ্ধিত হইয়া তোমাদিগকে অভীষ্ট ভোগ্যবস্তু প্রদান করেন, সুতরাং তাঁহাদিগের প্রদত্ত অন্নপানাদি যজ্ঞাদি-দ্বারা তাহাদিগকে প্রদান না করিয়া যে ভোগ করে সে নিশ্চয়ই চোর (দেবস্বাপহারী।
যজ্ঞাশিষ্টাশিনঃ সন্তো মুচ্যন্তে সর্ব্বকিল্বিষৈঃ।
ভুঞ্জতে তে ত্বঘং পাপা য পচন্ত্যাত্মকারণাৎ।।১৩
অর্থঃ-(১৩) যে সজ্জনগণ যজ্ঞাবশেষ অন্ন ভোজন করেন অর্থাৎ দেবতা, অতিথি প্রভৃতিকে অন্নাদি প্রদান করিয়া অবশিষ্ট ভোজন করেন তাঁহারা সর্ব্বপাপ হইতে মুক্ত হন। যে পাপাত্মারা কেবল আপন উদরপূরণার্থ অন্ন পাক করে, তাহারা পাপরাশিই ভোজন করে।
অন্নাদ্ ভবন্তি ভূতানি পর্জ্জন্যাদন্নসম্ভবঃ।
যজ্ঞাদ্ ভবতি পর্জ্জন্যো যজ্ঞঃ কর্ম্মসমুদ্ভবঃ।।১৪
কর্ম্ম ব্রহ্মোদ্ভবং বিদ্ধি ব্রহ্মাক্ষরসমুদ্ভবম্।
তস্মাৎ সর্ব্বগতং ব্রহ্ম নিত্যং যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিতম্।।১৫
এবং প্রবর্ত্তিতং চক্রং নানুবর্ত্তয়তীহ যঃ।
অঘায়ুরিন্দ্রিয়ারামো মোঘং পার্থ স জীবতি।।১৬
অর্থঃ-(১৪,১৫,১৬) প্রাণিসকল অন্ন হইতে উৎপন্ন হয়, মেঘ হইতে অন্ন জন্মে, যজ্ঞ হইতে মেঘ জন্মে, কর্ম্ম হইতে যজ্ঞের উৎপত্তি, কর্ম্ম বেদ হইতে উৎপন্ন জানিও এবং বেদ পরব্রহ্ম হইতে সমুদ্ভূত; সেই হেতু সর্ব্বব্যাপী পরব্রহ্ম সদা যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিত আছেন। এইরূপে প্রবর্ত্তিত জগচ্চক্রের যে অনুবর্ত্তন না করে (অর্থাৎ যে যজ্ঞাদি কর্ম্মদ্বারা এই সংসার-চক্র জগচ্চক্রের যে অনুবর্ত্তন না করে (অর্থাৎ যে যজ্ঞাদি কর্মদ্বারা এই সংসার-চক্র পরিচালনের সহায়তা না করে) সে ইন্দ্রিয়সুখাসক্ত ও পাপজীবন; হে পার্থ, সে বৃথা জীবন ধারণ করে।
যস্ত্বাত্মরতিরেব স্যাদাত্মতৃপ্তশ্চ মানবঃ।
আত্মন্যেব চ সন্তুষ্টস্তস্য কার্য্যং ন বিদ্যতে।।১৭
অর্থঃ-(১৭) কিন্তু যিনি কেবল আত্মাতেই প্রীত, যিনি আত্মাতেই তৃপ্ত, যিনি কেবল আত্মাতেই সন্তুষ্ট থাকেন, তাঁহার নিজের কোন প্রকার কর্ত্তব্য নাই।
নৈব তস্য কৃতেনার্থো নাকৃতেনেহ কশ্চন।
ন চাস্য সর্ব্বভূতেষু কশ্চিদর্থব্যপাশ্রয়ঃ।।১৮
অর্থঃ-(১৮) যিনি আত্মারাম তাঁহার কর্মানুষ্ঠানে কোন প্রয়োজন নাই, কর্ম্ম হইতে বিরত থাকারও কোন প্রয়োজন নাই। সর্ব্বভূতের মধ্যে কাহারও আশ্রয়ে তাঁহার প্রয়োজন নাই (তিনি কাহারও আশ্রয়ে সিদ্ধকাম হইবার আবশ্যকতা রাখেন না)।
তস্মাদসক্তঃ সততং কার্যং কর্ম্ম সমাচর।
অসক্তো হ্যাচরন্ কর্ম্ম পরমাপ্নোতি পুরুষঃ।।১৯
অর্থঃ-(১৯) অতএব তুমি আসক্তিশূন্য হইয়া সর্ব্বদা কর্ত্তব্য কর্ম্ম সম্পাদন কর, কারণ অনাসক্ত হইয়া কর্মানুষ্ঠান করিলে পুরুষ পরমপদ (মোক্ষ) প্রাপ্ত হন।
কর্ম্মণৈব হি সং সিদ্ধিমাস্থিতা জনকাদয়ঃ।
লোকসংগ্রহমেবাপি সংপশ্যন্ কর্ত্তুমর্হসি।।২০
অর্থঃ-(২০) জনকাদি মহাত্মারা কর্ম্ম দ্বারাই সিদ্ধিলাভ করিয়াছেন। লোকরক্ষার দিকে দৃষ্টি রাখিয়াও তোমার কর্ম্ম করাই কর্ত্তব্য।
যদ্ যদাচরতি শ্রেষ্ঠস্তত্তদেবেতরো জনঃ।
স যৎ প্রমাণং কুরুতে লোকস্তদনুবর্ত্ততে।।২১
অর্থঃ-(২১) শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যাহা যাহা অচরণ করেন, অপর সাধারণেও তাহাই করে। তিনি যাহা প্রামাণ্য বলিয়া বা কর্ত্তব্য বলিয়া গ্রহণ করেন, সাধারণ লোকে তাহারই অনুবর্ত্তন করে।
ন মে পার্থাস্তি কর্ত্তব্যং ত্রিষু লোকেষু কিঞ্চন।
নানবাপ্তমবাপ্তব্যং বর্ত্ত এব চ কর্ম্মণি।।২২
অর্থঃ-(২২) হে পার্থ, ত্রিলোক মধ্যে আমার করণীয় কিছু নাই, অপ্রাপ্ত বা প্রাপ্তব্য কিছু নাই, তথাপি আমি কর্মানুষ্ঠানেই ব্যাপৃত আছি।
যদি হ্যহং ন বর্ত্তেয় জাতু কর্ম্মণ্যতন্দ্রিতঃ।
মম বর্ত্মানুবর্ত্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্ব্বশঃ।।২৩
অর্থঃ-(২৩) হে পার্থ, যদি অনলস হইয়া কর্মানুষ্ঠান না করি, তবে মানবগণ সর্ব্বপ্রকারে আমারই পথের অনুবর্ত্তী হইবে। (কেহই কর্ম্ম করিবে না)।
উৎসীদেয়ুরিমে লোকা ন কুর্য্যাং কর্ম্ম চেদহম্।
সঙ্করস্য চ কর্ত্তা স্যামুপহন্যামিমাঃ প্রজাঃ।।২৪
অর্থঃ-(২৪) যদি আমি কর্ম্ম না করি তাহা হইলে এই লোক সকল উৎসন্ন যাইবে। আমি বর্ণ-সঙ্করাদি সামাজিক বিশৃঙ্খলার হেতু হইব এবং ধর্ম্মলোপহেতু প্রজাগণের বিনাশের কারণ হইব।
সক্তাঃ কর্ম্মণ্যবিদ্বাংসো যথা কুর্ব্বন্তি ভারত।
কুর্য্যাদ্বিদ্বাংস্তথাসক্তশ্চিকীর্ষুর্লোকসংগ্রহম্।।২৫
অর্থঃ-(২৫) হে ভারত, অজ্ঞ ব্যক্তিরা কর্ম্মে আসক্তিবিশিষ্ট হইয়া যেরূপ কর্ম করিয়া থাকে, জ্ঞানী ব্যক্তিরা অনাসক্ত চিত্তে লোকরক্ষার্থে সেইরূপ কর্ম্ম করিবেন।
ন বুদ্ধিভেদং জনয়েদজ্ঞানাং কর্ম্মসঙ্গিনাম্।
যোজয়েৎ সর্ব্বকর্ম্মাণি বিদ্বান্ যুক্তঃ সমাচরন্।।২৬
অর্থঃ-(২৬) জ্ঞানীরা কর্মে আসক্ত অজ্ঞানদিগের বুদ্ধিভেদ জন্মাইবেন না। আপনারা অবহিত হইয়া সকল কর্ম অনুষ্ঠান করিয়া তাহাদিগকে কর্ম্মে নিযুক্ত রাখিবেন।
প্রকৃতেঃ ক্রিয়মাণানি গুণৈঃ কর্ম্মাণি সর্ব্বশঃ।
অহঙ্কারবিমূঢ়াত্মা কর্ত্তাহমিতি মন্যতে।।২৭
অর্থঃ-(২৭) প্রকৃতির গুণসমূহদ্বারা সর্ব্বতোভাবে কর্মসকল সম্পন্ন হয়। যে অহঙ্কারে মুগ্ধচিত্ত সে মনে করে আমিই কর্ত্তা।
তত্ত্ববিত্তু মহাবাহো গুণকর্ম্মবিভাগয়োঃ।
গুণা গুণেষু বর্ত্তন্ত ইতি মত্বা ন সজ্জতে।।২৮
অর্থঃ-(২৮) কিন্তু হে মহাবাহো! যিনি সত্ত্বরজস্তমোগুণ ও মন, বুদ্ধি ইন্দ্রিয়াদির বিভাগ ও উহাদের পৃথক্ পৃথক্ কর্ম্ম-বিভাগ তত্ত্ব জানিয়াযছেন, তিনি ইন্দ্রিয়াদি ইন্দ্রিয়বিষয়ে প্রবৃত্ত আছে ইহা জানিয়া কর্ম্মে আসক্ত হন না, কর্ত্তৃত্বাভিমান করেন না।
প্রকৃতের্গুণসংমুঢ়াঃ সজ্জন্তে গুণকর্ম্মসু।
তানকৃৎস্নবিদো মন্দান্ কৃতস্নবিন্ন বিচালয়েৎ।।২৯
অর্থঃ-(২৯) যাহারা প্রকৃতির গুণে মোহিত তাহারা দেহেন্দ্রিয়াদি কর্ম্মে আসক্তিযুক্ত হয়; সেই সকল অল্পবুদ্ধি মন্দমতিদিগকে জ্ঞানিগণ কর্ম্ম হইতে বিচালিত করিবেন না।
ময়ি সর্ব্বাণি কর্ম্মাণি সংন্যস্যাধ্যাত্মচেতসা।
নিরাশীর্নির্ম্মমো ভূত্বা যুধ্যস্ব বিগতজ্বরঃ।।৩০
অর্থঃ-(৩০) কর্ত্তা ঈশ্বর, তাঁহারই উদ্দেশ্যে ভৃত্যবৎ কর্ম্ম করিতেছি, এইরূপ বিবেকবুদ্ধি সহকারে সমস্ত করম্ম আমাতে সমর্পণ করিয়া কামনাশূন্য ও মমতাশূন্য হইয়া শোকত্যাগপূর্ব্বক তুমি যুদ্ধ কর।
যে মে মতমিদং নিত্যমনুতিষ্ঠন্তি মানবাঃ।
শ্রদ্ধাবন্তোহনসূয়ন্তো মূচ্যন্তে তেহপি কর্ম্মভিঃ।।৩১
অর্থঃ-(৩১) যে মানবগণ শ্রদ্ধাবান ও অসূয়াশূন্য হইয়া আমার এই মতের অনুষ্ঠান করে, তাহারাও কর্ম্মবন্ধন হইতে মুক্ত হয়।
যে ত্বেতদভ্যসুয়ন্তো নানুতিষ্ঠন্তি মে মতম্।
সর্ব্বজ্ঞানবিমুঢ়াংস্তান্ বিদ্ধি নষ্টানচেতসঃ।।৩২
অর্থঃ-(৩২) যাহারা অসূয়াপরবশ হইয়া আমার এই মতের অনুষ্ঠান করে না, সেই বিবেকহীন ব্যক্তিগণকে সর্ব্বজ্ঞান-বিমূঢ় ও বিনষ্ট বলিয়া জানিও।
সদৃশং চেষ্টতে স্বস্যাঃ প্রকৃতের্জ্ঞানবানপি।
প্রকৃতিং যান্তি ভূতানি নিগ্রহঃ কিং করিষ্যতি।।৩৩
অর্থঃ-(৩৩) জ্ঞানবান্ ব্যক্তিও নিজ প্রকৃতির অনুরূপ কর্ম্মই করিয়া থাকেন। প্রাণিগণ প্রকৃতিরই অনুসরণ করে; ইন্দ্রিয়-নিগ্রহে কি করিবে?
ইন্দ্রিয়স্যেন্দ্রিয়স্যার্থে রাগদ্বেষৌ ব্যবস্থিতৌ।
তয়োর্ন বশমাগচ্ছেৎ তৌ হ্যস্য পরিপন্থিনৌ।।৩৪
অর্থঃ-(৩৪) সকল ইন্দ্রিয়েরই স্ব স্ব বিষয়ে রাগদ্বেষ অবশ্যম্ভাবী। ঐ রাগদ্বেষের বশীভূত হইও না; উহারা জীবের শত্রু (অথবা, শ্রেয়োমার্গের বিঘ্নকারক)।
শ্রেয়ান্ স্বধর্ম্মো বিগুণঃ পরধর্ম্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ।
স্বধর্ম্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্ম্মো ভয়াবহঃ।।৩৫
অর্থঃ-(৩৫) স্বধর্ম্ম কিঞ্চিদ্দোষবিশিষ্ট হইলেও উহা উত্তমরূপে অনুষ্ঠিত পরধর্ম্মাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। স্বধর্ম্মে নিধনও কল্যাণকর, কিন্তু পরধর্ম গ্রহণ করা বিপজ্জনক।
অর্জ্জুন উবাচ –
অথ কেন প্রযুক্তোহয়ং পাপং চরতি পুরুষঃ।
অনিচ্ছন্নপি বার্ষ্ণেয় বলাদিব নিয়োজিতঃ।।৩৬
অর্থঃ-(৩৬) অর্জ্জুন কহিলেন – হে কৃষ্ণ, লোকে কাহাদ্বারা প্রযুক্ত হইয়া অনিচ্ছা-সত্ত্বেও যেন বলপুর্ব্বক নিয়োজিত হইয়াই পাপাচরণ করে।
শ্রীভগবান্ উবাচ –
কাম এষ ক্রোধ এষ রজোগুণসমুদ্ভবঃ।
মহাশনো মহাপাপ্মা বিদ্ধ্যেনমিহ বৈরিণম্।।৩৭
অর্থঃ-(৩৭) ইহা কাম, ইহাই ক্রধ। ইহা রজোগুণোৎপন্ন, ইহা দুস্পুরণীয় এবং অতিশয় উগ্র। ইহাকে সংসারে শত্রু বলিয়া জানিবে।
ধুমেনাব্রিয়তে বহ্নির্যথাদর্শো মলেন চ।
যথোল্বেনাবৃতো গর্ভস্তথা তেনেদমাবৃতম্।।৩৮
অর্থঃ-(৩৮) যেমন ধূমদ্বারা বহ্নি আবৃত থাকে, মলদ্বারা দর্পণ আবৃত হয়, জরায়ূদ্বারা গর্ভ আবৃত থাকে, সেইরূপ কামের দ্বারা জ্ঞান আবৃত থাকে। [বিষয়-বাসনা থাকিতে আত্মজ্ঞানের উদয় হয় না। যেমন ধূম অপসারিত হইলে অগ্নি প্রকাশিত হয়, ধূলিমল অপসারিত হইলে দর্পণের স্বচ্ছতা প্রতিভাত হয়, প্রসবের দ্বারা জরায়ূ প্রসারিত হইলে ভ্রুণের প্রকাশ হয়, সেইরূপ বিষয়-বাসনা বিদূরিত হলে তত্ত্বজ্ঞানের উদয় হয় (সংসারের ক্ষয় হয়)।]
আবৃতং জ্ঞানমেতেন জ্ঞানিনো নিত্যবৈরিণা।
কামরূপেণ কৌন্তেয়! দুষ্পুরেণানলেন চ।।৩৯
অর্থঃ-(৩৯) হে কৈন্তেয়, জ্ঞানীদিগের নিত্যশত্রু এই দুস্পূরণীয় অগ্নিতুল্য কামদ্বারা জ্ঞান আচ্ছন্ন থাকে।
ইন্দ্রিয়াণি মনোবুদ্ধিরস্যাধিষ্ঠানমুচ্যতে।
এতৈর্ব্বিমোহয়ত্যেষ জ্ঞানমাবৃত্য দেহিনম্।।৪০
অর্থঃ-(৪০) ইন্দ্রিয়সকল, মন ও বুদ্ধি – ইহারা কামের অধিষ্ঠান বা আশ্রয়স্থান বলিয়া কথিত হয়। কাম ইহাদিগকে অবলম্বন করিয়া জ্ঞানকে আচ্ছন্ন করিয়া জীবকে মুগ্ধ করে।
তস্মাৎ ত্বমিন্দ্রিয়াণ্যাদৌ নিয়ম্য ভরতর্ষভ।
পাপমানং প্রজহি হ্যেনং জ্ঞানবিজ্ঞাননাশনম্।৪১
অর্থঃ-(৪১) কাম, প্রবল শত্রু। ইন্দ্রিয়াদি উহার অবলম্বন বা আশ্রয়স্বরূপ। তুমি প্রথমে কামের অবলম্বন স্বরূপ ইন্দ্রিয়দিগকে জয় কর, তবেই কাম জয় করিতে পারিবে।
ইন্দ্রিয়াণি পরাণ্যাহুরিন্দ্রিয়েভ্যঃ পরং মনঃ।
মনসস্তু পরা বুদ্ধির্যোবুদ্ধে পরতস্তু সঃ।।৪২
অর্থঃ-(৪২) ইন্দ্রিয়সকল শ্রেষ্ঠ বলিয়া কথিত হয়; ইন্দ্রিয়গণ অপেক্ষা মন শ্রেষ্ঠ; মন অপেক্ষা বুদ্ধি শ্রেষ্ঠ; বুদ্ধি হইতে যিনি শ্রেষ্ঠ তিনিই আত্মা।
এবং বুদ্ধে পরং বুদ্ধ সংস্তভ্যাত্মানমাত্মনা।
জহি শত্রুং মহাবাহো! কামরূপং দুরাসদং।।৪৩
অর্থঃ-(৪৩) অথবা নিজেই নিজেকে সংযত করিয়া কামরূপ দুর্জ্জয় শত্রুকে মারিয়া ফেল (লোকমান্য তিলক); অথবা, নিশ্চয়াত্মিকা বুদ্ধিদ্বারা মনকে নিশ্চল করিয়া কামরূপ দুর্জ্জয় শত্রু (কামকে) বিনাশ কর (স্বামিকৃত টীকা)।

৪) নৈষ্কর্ম্য লাভ : কর্মবন্ধন হইতে মুক্তি বা নিষ্কৃতির অবস্থাকে নৈষ্কর্ম্যসিদ্ধি বা মোক্ষ বলে । শ্রীগীতা বলেন সন্ন্যাসমার্গে মোক্ষ লাভ হয় জ্ঞানের ফলে, কর্মত্যাগের ফলে নয় । কর্ম বন্ধনের কারণ নয়, অহঙ্কার ও কামনাই বন্ধনের কারণ । কামনা ত্যাগেও জ্ঞানের প্রয়োজন এবং সেই হেতুই নিষ্কাম-কর্মও মোক্ষপ্রদ । মোক্ষের জন্য চাই, অহঙ্কার ও ফলাসক্তি ত্যাগ, কর্মত্যাগ প্রয়োজন হয় না । বস্তুত দেহধারী জীব একেবারে কর্মত্যাগ করিতেই পারে না ।

৬-৭) মিথাচারী ও কর্মযোগী : হস্তপদাদি সংযত করিয়া ধ্যানে বসিয়াছি । মন বিষয়ে ভ্রমণ করিতেছে । আমি মিথাচারী । এই অবস্থা উল্টাইয়া লইতে পারিলে আমি কর্মযোগী হইব । অর্থাৎ যখন ইন্দ্রিয়ের দ্বারা বিষয়-কর্ম করিতেছি, কিন্তু মন ঈশ্বরে নিবিষ্ট আছে, বিষয়-কর্মও তাঁহারই কর্ম মনে করিয়া কর্তব্যবোধে করিতেছি, উহাতে আসক্তি নাই, ফলাকাঙ্ক্ষা নাই । সিদ্ধি-অসিদ্ধিতে হর্ষ-বিষাদ নাই ।

৮) নিয়ত কর্ম : সাধারণত শাস্ত্রবিহিত কর্তব্য-কর্ম (duty), স্বধর্ম – লোকমান্য তিলক । এখানে ইন্দ্রিয়সকল সংযত করিয়া (নিয়ম্য) যে কর্ম তাহাই বুঝায় (controlled action) ।

ধর্মশাস্ত্র : স্বেচ্ছাচারিতা ও উচ্ছৃঙ্খলতা নিবারণপূর্বক ধর্ম ও লোকরক্ষার উদ্দেশ্যে যে সকল বিধি-নিষেধ প্রবর্তিত হইয়াছে । শাস্ত্র সকল সম্প্রদায়ের, সকল সমাজের, সকল জাতিরই আছে । সকলের পক্ষেই শাস্ত্রবিহিত কর্মই কর্তব্য-কর্ম । হিন্দুর কর্মজীবনে ও ধর্মজীবনে পার্থক্য নাই, তাই হিন্দুর সাংসারিক-কর্ম-নিয়ামক শাস্ত্রু ধর্মশাস্ত্র । তিন সহস্র-বৎসর পূর্বে প্রবর্তিত কোনো শাস্ত্রবিধি যদি অবস্থার পরিবর্তনে সমাজরক্ষার প্রতিকূল বোধ হয়, তবে তাহা অবশ্যই ত্যাজ্য । কেননা, যুক্তিহীন, গতানুগতিক ভাবে শাস্ত্র অনুসরণ করিলে ধর্মহানি হয় –
কেবলং শাস্ত্রমাশ্রিত্য ন কর্তব্যো বিনির্ণয়ঃ ।যুক্তিহীনবিচারেণ ধর্মহানিঃ প্রজায়তে ।। – বৃহস্পতি
স্বয়ং ব্রহ্মাও যদি অযৌক্তিক কথা বলেন, তবে তাহা তৃণবৎ পরিত্যাগ করিবে ।
অন্যং তৃণমিব ত্যাজ্যমপ্যুক্তং পদ্মজন্মনা – বশিষ্ঠ
৯) ‘যজ্ঞার্থ’ কর্ম কি ? বৈদিক যাগযজ্ঞাদি-ক্রিয়াকাণ্ড সমস্তই রূপাত্মক, উহাদের অন্তর্নিহিত গূঢ় অর্থ আছে । ‘যজ্ঞের মর্মভাব ত্যাগ, অতএব যজ্ঞার্থে কর্ম করার এরূপ অর্থও অসঙ্গত নহে যে, ত্যাগের ভাবে কর্মানুষ্ঠান করা । এইরূপ কর্মানুষ্ঠান যখন অভ্যাসে পরিণত হয়, তখন মানব-জীবন একটি মহাযজ্ঞের আকার ধারণ করে । সেই যজ্ঞের বেদী জগতের হিত, ত্যাগ, আত্মবলিদান এবং যজ্ঞেশ্বর স্বয়ং ভগবান ।’ [গীতায় যজ্ঞতত্ত্ব, বেদান্তরত্ন হীরেন্দ্রনাথ দত্ত]

১৩) পঞ্চমহাযজ্ঞ : মানুষ জীবনরক্ষার্থ অনিচ্ছাসত্ত্বেও প্রাণিহিংসা করিতে বাধ হয় । শাস্ত্রকারগণ গৃহস্তের পাঁচ প্রকার ‘সূনা’ অর্থাৎ জীবহিংসা-স্থানের উল্লেখ করেন । যথা – (i)উদূখল, (ii)জাঁতা, (iii)চুল্লী, (iv)জলকুম্ভ ও (v)ঝাঁটা । এগুলি গৃহস্তের নিত্য-ব্যবহার্য, অথচ এগুলি দ্বারা কীটপতঙ্গাদি প্রাণিবধও অনিবার্য, সুতরাং তাহাতে পাপও অবশ্যম্ভাবী । এই পাপমোচনার্থ পঞ্চমহাযজ্ঞের ব্যবস্থা । যথা – (i)অধ্যাপনা (এবং সন্ধ্যোপাসনাদি) ব্রহ্মযজ্ঞ/ঋষিযজ্ঞ, (ii)তর্পণাদি পিতৃযজ্ঞ, (iii)হোমাদি দৈবযজ্ঞ, (iv)কাকাদি-জীবজন্তুকে খাদ্যপ্রদান ভৃতযজ্ঞ ও (v)অতিথি-সৎকার নৃযজ্ঞ । সকলের প্রতিই মানুষের কর্তব্য আছে, এই কর্তব্যকেই শাস্ত্রে ‘ঋণ’ বলে । ত্যাগমূলক পঞ্চযজ্ঞদ্বারা পিতৃঋণ, দেবঋণ ইত্যাদি পরিশোধ করিতে হয় ।

১৪-১৫) গীতায় যজ্ঞবিধি : গীতা সকাম-যজ্ঞেরই বিরোধী, নিষ্কাম-যজ্ঞের নহে । যজ্ঞ, দান ও তপস্যা – এই সকল কর্ম চিত্তশুদ্ধিকর, উহা অবশ্যকর্তব্য; কিন্তু আসক্তি ও ফলকামনা ত্যাগ করিয়া এই সকল কর্ম করিতে হইবে [১৮|৫-৬] । ‘গীতার শ্লোকগুলিতে যে-যজ্ঞের বিধান আছে তাহাতে যদি আমরা কেবল আনুষ্ঠানিক যজ্ঞই বুঝি তাহা হইলে আমরা গীতোক্ত কর্ম-তত্ত্ব যথার্থ বুঝিতে পারিব না; বস্তুত, এই শ্লোকগুলির মধ্যে গভীর গূঢ়ার্থ আছে ।’ – [শ্রীঅরবিন্দ] । ‘যজ্ঞের মর্মভাব ত্যাগ (sacrifice) – [বেদান্তরত্ন হীরেন্দ্রনাথ দত্ত]

রহস্য – যুধিষ্ঠিরের যজ্ঞাদি
ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরও শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শক্রমেই ‘কাম্য কর্ম’ রাজসূয়-যজ্ঞের অনুষ্ঠান করিয়াছিলেন, কিন্তু নিষ্কামভাবে, কর্তব্যানুরোধে । এই রাজসূয়-যজ্ঞের উদেশ্য প্রধানত জরাসন্ধ, শিশুপাল প্রভৃতি ধর্মদ্বেষী অত্যাচারী ‘অসুরগণ’কে নত বা নিহত করিয়া একচ্ছত্র ধর্মরাজ্য সংস্থাপন । কিন্তু ঈদৃশ অশ্বমেধ-যজ্ঞ অপেক্ষাও যে বিশুদ্ধ ত্যাগ-লক্ষণ নৃযজ্ঞাদির শ্রেষ্ঠতা কম নহে, মহাভারতকার সুবর্ণনকুল-উপাখ্যানে তাহাও প্রদর্শন করিয়াছেন ।

সুবর্ণনকুল-উপাখ্যান : এক নকুল যুধিষ্ঠিরের অশ্বমেধ-যজ্ঞস্থলে আসিয়া অবিরত লুণ্ঠিত হইতেছিল । দেখা গেল, নকুলটির মুখ ও শরীরের অর্ধাংশ স্বর্ণময় । অদ্ভুত জীবটির অদ্ভুত কর্মের কারণ জিজ্ঞাসা করা হইলে নকুল বলিল – দেখিলাম, কুরুক্ষেত্রে এক উঞ্ছবৃত্তি ব্রাহ্মণ সপরিবারে উপবাসী থাকিয়া অতিথিকে সঞ্চিত সমস্ত যবচূর্ণ প্রদান করিলেন । সেই অতিথির ভোজনপাত্রে যৎকিঞ্চিৎ উচ্ছিষ্ট অবশিষ্ট ছিল, সেই পবিত্র যবকণার সংস্পর্শে আমার মুখ ও দেহার্ধ স্বর্ণময় হইয়াছে । অপরার্ধ স্বর্ণময় করিবার জন্য আমি নানা যজ্ঞস্থলে যাইয়া লুণ্ঠিত হইলাম, কিন্তু দেখিলাম এ-যজ্ঞ অপেক্ষা সেই ব্রাহ্মণের শক্তুযজ্ঞই শ্রেষ্ঠ; কেননা আমার দেহ স্বর্ণময় হইল না ।

১৭-১৯) জ্ঞানীর কর্ম : ‘উচ্চতর সত্যের অভিমুখ হইলেই কর্ম ত্যাগ করিতে হইবে না – সেই সত্য লাভ করিবার পূর্বে ও পরে নিষ্কাম কর্মসাধনই গূঢ় রহস্য । মুক্ত পুরুষের কর্মের দ্বারা লাভ করিবার কিছুই নাই, তবে কর্ম হইতে বিরত থাকিয়াও তাঁহার কোনো লাভ নাই এবং কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য তাঁহাকে কর্ম করিতে বা কর্ম ত্যাগ করিতে হয় না, অতএব যে কর্ম করিতে হইবে (জগতের জন্য, লোক-সংগ্রহার্থে [৩|২০]) সর্বদা অনাসক্ত হইয়া তাহা কর ।’ – শ্রীঅরবিন্দের গীতা

২০) লোকসংগ্রহম্‌ : লোকরক্ষা, সৃষ্টিরক্ষা । এ-স্থলে ‘লোক’ শব্দের অর্থ ব্যাপক । শুধু মনুষ্য-লোকের নহে, দেবাদি সমস্ত লোকের ধারণ-পোষণ হইয়া পরস্পরের শ্রেয় সম্পাদন করিবে । জ্ঞানী পুরুষ সমস্ত জগতের চক্ষু, ইঁহারা যদি নিজের কর্ম ত্যাগ করেন, তাহা হইলে অন্ধতমসাচ্ছন্ন হইয়া সমস্ত জগৎ ধ্বংস না হইয়া যায় না । লোকদিগকে জ্ঞানী করিয়া উন্নতির পথে আনয়ন করা জ্ঞানী পুরুষদিগেরই কর্তব্য ।

২৪) সঙ্করস্য : ‘সঙ্কর’ অর্থ পরস্পর-বিরুদ্ধ পদার্থের মিলন বা মিশ্রণ, উহার ফল সামাজিক বিশৃঙ্খলা । বর্ণসঙ্কর উহার প্রকার বিশেষ । বর্ণসঙ্কর, কর্মসঙ্কর, নানাভাবেই সাঙ্কর্য উপস্থিত হইতে পারে । লোকে স্বধর্মানুসারে কর্তব্য-পালন না করিলেই এইরূপ সাঙ্কর্য উপস্থিত হয় । এ-স্থলে সঙ্কর-শব্দের সাধারণ ব্যাপক অর্থ গ্রহণই কর্তব্য । মূল শ্লোকে “বর্ণের” উল্লেখ নেই [uploader’s comment] ।
শ্লোকের তাৎপর্য – আমি কর্ম না করিলে আমার দৃষ্টান্তের অনুসরণে সকলে স্বীয় কর্তব্য-কর্ম ত্যাগ করিয়া স্বেচ্ছাচারী হইয়া উঠিবে । স্বেচ্ছাচারে সাঙ্কর্য ও বিশৃঙ্খলা অবশ্যম্ভাবী । সামাজিক বিশৃঙ্খলায় ধর্মলোপ, সমাজের বিনাশ । সুতরাং লোক-শিক্ষার্থ, লোক-সংগ্রহার্থ আমি কর্ম করি, তুমিও তাহাই কর ।

কৃষ্ণই হিন্দুর জাতীয় আদর্শ : ‘আপনি আচরি ধর্ম লোকেরে শিখায়’ – শ্রীচৈতন্য-লীলাপ্রসঙ্গ । অবতারগণ মানব-ধর্ম স্বীকার করিয়া মানবী-শক্তির সাহায্যেই কর্ম করিয়া থাকেন, নচেৎ লোকে তাঁহাদের আদর্শ ধরিতে পারে না । এইভাবে দেখিলে, তাঁহারা আদর্শ মনুষ্য । শ্রীচৈতন্য, ভক্তরূপে স্বয়ং আচরণ করিয়া প্রেমভক্তি শিক্ষা দিয়াছেন । বুদ্ধদেব ত্যাগ ও বৈরাগ্যের প্রতিমূর্তি । শ্রীরামচন্দ্রে কর্তব্যনিষ্ঠার চরমোৎকর্ষ । আর শ্রীকৃষ্ণ সর্বতঃপূর্ণ, সর্বকর্মকৃৎ ।

২৫) নিষ্কাম কর্মের উদ্দেশ্য : দুইটি উদ্দেশ্য – (i)ভগবানের অর্চনা, (ii)সৃষ্টি রক্ষা । জ্ঞানী যদি কর্মত্যাগী হন, তবে জ্ঞান প্রচার করিবে কে ? কর্মে নিষ্কামতা শিক্ষা দিবে কে ? সংসার-কীট কর্মীকে ভগবানের দিকে আকর্ষণ করিবে কে ? কর্মী যদি স্বার্থান্বেষী হন, তবে জগতের দুঃখ মোচন করিবে কে ? তাই প্রহ্লাদ দুঃখ করিয়া বলিয়াছিলেন –
‘প্রায়ই দেখা যায়, মুনিরা নির্জনে মৌনাবলম্বন করিয়া তপস্যা করেন, তাঁহারা তো লোকের দিকে দৃষ্টি করেন না । তাঁহারা তো পরার্থনিষ্ঠ নন, তাঁহারা নিজের মুক্তির জন্যই ব্যস্ত, সুতরাং স্বার্থপর ।’
অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে যেমন রামকৃষ্ণ মিশন অথবা ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সন্ন্যাসীবৃন্দ । কিন্তু স্মরণ রাখিতে হইবে যে সেবাধর্মী সন্ন্যাসীবৃন্দের কর্মজীবনের আদর্শ কেবল সমাজ-সেবা বা ভূতহিত নয়, উহা তাঁহাদের শিক্ষার আনুষঙ্গিক ফল এবং উচ্চস্তরে উঠিবার সোপানমাত্র । স্বামী বিবাকানন্দের শিক্ষার মূল কথা ভাগবত-জীবন লাভ, সর্বজীবকে সত্ত্বশুদ্ধ করিয়া ভগবানের দিকে আকৃষ্ট করা । বর্তমান ভারতবাসী তমোগুণাক্রান্ত, রজোগুণের উদ্রেক না হইলে সত্ত্বে যাওয়া যায় না, এই জন্য তিনি কর্মের উপর এত জোর দিয়াছেন ।

‘দেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, সমাজসেবা, সমষ্টির সাধনা, এই সমস্ত যে আমাদের ব্যক্তিগত স্বার্থপরতার হস্ত হইতে পরিত্রাণ লাভ করিয়া অপরের জীবনের সহিত নিজের একত্ব উপলব্ধি করিবার প্রকৃষ্ট উপায় তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই । আদিম স্বার্থপরতার পর ইহা দ্বিতীয় অবস্থা । কিন্তু গীতা আরো উচ্চ তৃতীয় অবস্থার কথা বলিয়াছেন । দ্বিতীয় অবস্থাটি সেই তৃতীয় অবস্থায় উঠিবার আংশিক উপায় মাত্র । সেই এক সর্বাতীত সার্বজনীন ভাগবত সত্তা ও চৈতন্যের মধ্যে মানবের সমগ্র ব্যক্তিত্বকে হারাইয়া ক্ষুদ্র আমিকে হারাইয়া, বৃহত্তর আমাকে পাইয়া যে ভাগবত অবস্থা লাভ করা যায়, গীতায় তাহারই নিয়ম বর্ণিত হইয়াছে ।’ – শ্রীঅরবিন্দের গীতা (সংক্ষিপ্ত) ।

২৬) সন্ন্যাসবাদে ভারতের দুর্দশা :
প্রাচীন ভারত কর্মদ্বারাই গৌরবলাভ করিয়াছিল, শিক্ষা-সভ্যতায়, শিল্প-সাহিত্যে, শৌর্য-বীর্যে জগতে শীর্ষস্থান অধিকার করিয়াছিল । সেই ভারতবাসী আজ অলস, অকর্মা, বাক্যবাগীশ বলিয়া জগতে উপহাসাস্পদ । এ-দুর্দশা কেন ? ভারতকে কর্ম হইতে বিচ্যুত করিল কে ? ভারতে এ-বুদ্ধিভেদ জন্মিল কিরূপে ?

বুদ্ধদেবের অষ্টাঙ্গ পথ, শঙ্করের মায়াবাদ, পরবর্তী ধর্মাচার্যগণের দ্বৈতবাদ, এ-সকলে জ্ঞান, বৈরাগ্য, প্রেম, ভক্তি সবই আছে, কিন্তু কর্মের প্রেরণা নাই, কর্মপ্রশংসা নাই, কর্মোপদেশ নাই । কুরুক্ষেত্রের সমরাঙ্গনে যে শঙ্খধ্বনি উত্থিত হইয়াছিল, ‘কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন’, সে ধ্বনির আর কেহ প্রতিধ্বনি করেন নাই, তেমন কথা ভারতবাসী তিন-সহস্র বৎসরের মধ্যে আর শুনে নাই । মধ্যযুগে সে কেবল শুনিয়াছে – ‘কর্মে জীবের বন্ধন, জ্ঞানেই মুক্তি’, ‘সন্ন্যাস গ্রহণ করিলেই মানুষ নারায়ণ হয়’ এই সব । ফলে, সংসারে জাতবিতৃষ্ণ, কর্মবিমুখ অদৃষ্টবাদীর সৃষ্টি, দলে-দলে অনধিকারীর সন্ন্যাস গ্রহণ, ধর্মধ্বজী ভিক্ষোপজীবীর সংখ্যাবৃদ্ধি । এইরূপে কালে সমাজ হইতে রজোগুণের সম্পূর্ণ অন্তর্ধান হইল, সত্ত্বগুণাশ্রিত অতি অল্পসংখ্যক ব্যক্তি সমাজ হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া জ্ঞানভক্তির চর্চায় নিযুক্ত রহিলেন – তমোগুণাক্রান্ত নিদ্রাভিভূত জনসাধারণ শত্রুর আক্রমণে চমকিত হইয়া ‘কপালের লিখন’ বলিয়া চিত্তকে প্রবোধ দিল ।

পূর্বে যে-সকল মহাপুরুষের কথা উল্লিখিত হইল ইঁহারা সকলেই যুগাবতার । সনাতন ধর্মের গ্লানি উপস্থিত হইলে, সেই গ্লানি নিবারণ করিয়া উহার বিশুদ্ধি ও সময়োপযোগী পরিবর্তন সাধনের জন্যই যুগধর্মের প্রবর্তন হয় । তত্তৎকালে ঐ সকল ধর্মপ্রবর্তনের প্রয়োজন ছিল বলিয়াই এই যুগাবতারগণের আবির্ভাব । ইঁহারা কখনো অনধিকারীকে সোহহং জ্ঞান বা সন্ন্যসাদি উপদেশ দেন নাই । কিন্তু কালের গতিতে যুগধর্মেরও ব্যভিচার হয়, লোকে উহার প্রকৃত মর্ম গ্রহণ করিতে না পারিয়া নানারূপ উপধর্মের সৃষ্টি করে, উহাতেই কুফল ঘটে ।

২৭-৩০) কর্মী ও কর্মযোগী :
প্রশ্নঃ জ্ঞানীও কর্ম করেন, অজ্ঞানও কর্ম করেন, তবে জ্ঞানী ও অজ্ঞানে পার্থক্য কি ?
উত্তরঃ অজ্ঞান ব্যক্তি মনে করেন, কর্ম করি আমি, জ্ঞানী মনে করেন, কর্ম করেন প্রকৃতি । অজ্ঞান ‘আমি’টাকে কর্মের সহিত যোগ করিয়া দেন বলিয়াই ফলাসক্ত হন । সুতরাং অজ্ঞানের কর্ম ভোগ, জ্ঞানীর কর্ম যোগ । কর্মী হইলেই কর্মযোগী হয় না । কর্তৃত্বাভিমান ও ফলাকাঙ্খা বর্জন ব্যতীত কর্ম যোগে পরিণত হয় না ।

‘কাঁচা আমি’ ও ‘পাকা আমি’ : “মানুষের ভিতর ‘কাঁচা আমি’ ও ‘পাকা আমি’, এই দুই রকম ‘আমি’ আছে । অহঙ্কারী আমি কাঁচা আমি । এ-আমি মহাশত্রু । ইহাকে সংহার করা চাই । মুক্তি হবে কবে, অহং যাবে যবে । সমাধি হলে তাঁর সঙ্গে এক হওয়া যায়, আর অহং থাকে না । জ্ঞান হবার পর যদি অহং থাকে তবে জেনো সে বিদ্যার আমি, ভক্তির আমি, দাস আমি, সে অবিদ্যার আমি নয় । সে পাকা আমি । প্রহ্লাদ, নারদ, হনুমান, এঁরা সমাধির পর ভক্তি রেখেছিলেন; শঙ্করাচার্য, রামানুজ, এঁরা বিদ্যার আমি রেখেছিলেন ।” – শ্রীরামকৃষ্ণ ।

সমাধি : সমাধি হইলেই যে বাহ্য বিষয়ের জ্ঞান লোপ পাইবে, তাঁহার শরীর ও মনের জ্ঞানও লোপ পাইবে, এমন-কি তাঁহার শরীর দগ্ধ করিলেও জ্ঞান হইবে না, তাহা নহে । সমাধিস্থ ব্যক্তির প্রধান লক্ষণ এই যে, তাঁহার ভিতর হইতে সমস্ত কামনা দূর হয়, সংসারের শুভাশুভ, সুখ-দুঃখ, কর্ম-কোলাহলে মন সম্পূর্ণ অবিচলিত থাকে, তিনি আত্মার আনন্দেই তৃপ্ত থাকেন – যখন সাধারণের চক্ষুতে তাঁহাকে দেখায় যে, তিনি সাংসারিক বাহ্য-ব্যাপারে ব্যস্ত, তখনো সম্পূর্ণভাবে ভগবানের দিকেই তাঁহার লক্ষ্য থাকে ।

৩৩) স্বভাব কাহাকে বলে ?
জীবমাত্রেই একটি বিশেষ প্রকৃতি লইয়া জন্মগ্রহণ করে এবং প্রকৃতির অনুগামী হইয়া সে কর্ম করে । এই প্রকৃতি কি ? শাস্ত্রকারগণ বলেন, পূর্বজন্মার্জিত ধর্মাধর্ম-জ্ঞানেচ্ছাদিজনিত যে-সংস্কার তাহা বর্তমান জন্মে অভিব্যক্ত হয়; এই সংস্কারের নামই প্রকৃতি । পূর্বে বলা হইয়াছে যে, ত্রিগুণাত্মিকা প্রকৃতির প্রেরণায়ই জীব কর্ম করে [৩|২৭-২৯] । বস্তুত, এই প্রাক্তন সংস্কারের মূলেও সেই ত্রিগুণ । পূর্বজন্মের ধর্মাধর্ম কর্মফলে গুণবিশেষের প্রাবল্য বা হ্রাস হইয়া স্বভাবের যে অবস্থা দাঁড়ায়, তাহাই প্রাচীন সংস্কার বা অভ্যাস । কাহারো মধ্যে সত্ত্বগুণের, কাহাতে রজোগুণের, কাহাতে তমোগুণের প্রাবল্য । আবার গুণত্রয়ের সংযোগে নানাবিধ মিশ্রগুণেরও উৎপত্তি হয়; যথা – সত্ত্ব-রজঃ, রজ-স্তমঃ ইত্যাদি । যখন যাহার মধ্যে যে গুণ প্রবল হয়, তখন তাহার মধ্যে সেই গুণের কার্য হইয়া থাকে । ইহাকেই স্বভাবজ কর্ম বলে । এ-স্থলে বলা হইতেছে, জীবের প্রবৃত্তি স্বভাবেরই অনুবর্তন করে, স্বভাবই বলবান, ইন্দ্রিয়ের নিগ্রহে বা শাস্ত্রাদির শাসনে কোন ফল হয় না ।

৩৪) তবে কি জীবের স্বাতন্ত্র্য নাই, তাহার আত্মোন্নতির উপায় নাই ?
আছে । ইন্দ্রিয়সমূহকে নিগ্রহ বা পীড়ন না করিয়া তাহাদিগকে বশীভূত করিতে হইবে । স্ব-স্ব বিষয়ে রাগদ্বেষ ইন্দ্রিয়ের স্বাভাবিক, কিন্তু জীবের রাগদ্বেষের বশে যাওয়া উচিত নয় । যিনি রাগদ্বেষ হইতে বিমুক্ত, তিনি ইন্দ্রিয়ের অধীন নন, ইন্দ্রিয়সমূহই তাঁহার অধীন হয় । এইরূপ আত্মবশীভূত ইন্দ্রিয়দ্বারা স্বকর্ম করিতে হইবে, স্বধর্ম পালন করিতে হইবে [২|৬৪] ।

৩৫) যুগধর্ম : সময়োপযোগী পরিবর্তন সাধনের জন্যই যুগধর্মের প্রবর্তন হয় এবং সনাতন ধর্মের বিশুদ্ধি রক্ষিত হয় । বিশদ : স্বধর্ম বলিতে কি বুঝায় ?

৩৭) ষড়রিপু : (i)কাম, (ii)ক্রোধ, (iii)লোভ, (iv)মোহ, (v)মদ, (vi)মাৎসর্য ।
কাম = যে-কোন রূপ ভোগবাসনা ।
ক্রোধ = বাসনা প্রতিহত হইলেই ক্রোধের উদ্রেক হয় ।
লোভ = মিষ্টরসাদি বা ধনাদির দিকে অতিমাত্রায় আকৃষ্ট হওয়া ।
মোহ = বিষয়-বাসনারূপ অজ্ঞান বা মায়া যা আত্মজ্ঞান আচ্ছন্ন করিয়া রাখে, উহার অতীত নিত্যবস্তুকে দেখিতে দেয় না ।
মদ = এই অজ্ঞানতার ফলে ‘আমি ধনী’, ‘আমি জ্ঞানী’ এইরূপ অহমিকা ।
মাৎসর্য = পরশ্রীকাতরতা; পরের উন্নতি-দর্শনে নিজের অহমিকার খণ্ডনের ফলে উপস্থিত চিত্তক্ষোভ ।
সুতরাং, ষড়রিপুগুলির ্মূল হইতেছে কাম, কামনা বা বাসনা । এইগুলি এক বস্তুরই বিভিন্ন বিকাশ, এক ভাবেরই বিভিন্ন বিভাব ।

৩৮) বিষয়-বাসনা থাকিতে আত্মজ্ঞানের উদয় হয় না । যেমন ধূম অপসারিত হইলে অগ্নি প্রকাশিত হয়, ধূলিমল অপসারিত হইলে দর্পণের স্বচ্ছতা প্রতিভাত হয়, প্রসবের দ্বারা জরায়ূ প্রসারিত হইলে ভ্রুণের প্রকাশ হয়, সেইরূপ বিষয়-বাসনা বিদূরিত হলে তত্ত্বজ্ঞানের উদয় হয় (সংসারের ক্ষয় হয়) ।

৪৩) আত্মস্বাতন্ত্র্য ও প্রকৃতির বশ্যতা :
জীব যখন ‘পাকা আমি’কে জানিতে পারে, তাঁহার প্রেরণা বুঝিতে পারে, তখন তাহার প্রকৃতির বশ্যতা থাকে না । ‘পাকা আমি’র জ্ঞানের দ্বারা ‘কাঁচা আমি’ দূরীভূত হন – ইহাকেই বলা হইতেছে – আত্মার দ্বারা আত্মাকে স্থির করা বা নিজেই নিজেকে স্থির করা । ইহারই নাম আত্ম-স্বাতন্ত্র্য ।

BISHWASHWOR ROY. Powered by Blogger.